Press ESC to close

ডিসেন্ট ইনটু মাইসেলফ – চিকিৎসা, সাহিত্য, এবং আত্মসমীক্ষার সমীকরণ

১১ ফেব্রুয়ারি, ১৯১৮। মস্কোর হাসপাতালে ডাক-মারফত পুরনো দোমড়ানো মোচড়ানো প্রেসক্রিপশনের পেছনে লেখা একটি চিঠি পেয়েছিলেন ডক্টর বোমগার্ড। প্রেরক সুহৃদ, তরুণ চিকিৎসক ডক্টর সার্গেই পোলিয়াকভ। চিঠিতে তাঁকে খুব তাড়াতাড়ি তাঁকে দেখতে আসার অনুরোধ লেখা ছিল পোলিয়াকভের। সেই সময়, আর পাননি বোমগার্ড। কিছু দিনের মধ্যেই মস্কো হাসপাতালের ক্যাজুয়াল্টি ওয়ার্ডে জেরেলিভো ক্লিনিক থেকে বুলেটে আত্মঘাতী আক্রমণে প্রায়-নিস্পন্দ একটি শরীর আসে। স্পন্দন ক্রমশ কমে আসা ডক্টর(Doctor) পোলিয়াকভ, বোমগার্ডকে তাঁর শেষ ডায়েরি পড়তে দিয়েছিলেন। মরফিন আক্রান্ত এক বীভৎসতার কথা। বুলেটের ফেটাল শট ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না পোলিয়াকভের। 

পথ্যসূত্র : জীবে প্রেম করে যেই জন – গৈরিক গঙ্গোপাধ্যায়

গল্পের নাম ‘মরফিন’। প্রেক্ষিত প্রথম বিশ্বযুদ্ধকালীন রাশিয়া। চরিত্রের নামগুলি কাল্পনিক হলেও ঘটনা ভয়ঙ্করভাবে বাস্তব। বইয়ের নাম ‘দ্য কান্ট্রি ডক্টর্স নোটবুক’। লেখক মিখাইল বুলগাকভ। তখনও ‘দ্য মাস্টার অ্যান্ড মার্গেরিটা’ লেখা হয়নি। তবে ‘দ্য কান্ট্রি ডক্টর্স নোটবুক’-এর গল্পগুলি অধিকাংশই বুলকাভের খ্যাতির প্রাইম পয়েন্টেই প্রকাশিত। গল্পগুলি লেখা যদিও কেরিয়ার তৈরির মুহূর্তে।  

চিকিৎসা এবং সাহিত্য। সম্পর্কের বুনন। এক এক করে বাস্তবের রক্ত-মাংস’দের কথায় আসি। মিখাইল বুলগাকভকে দিয়ে কথার শুরু। কিয়েভ ইউনিভার্সিটি থেকে চিকিৎসাবিজ্ঞান পড়া। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় রেড ক্রসের হয়ে স্বেচ্ছাসেবক চিকিৎসকের দায়িত্বপালন এবং ইউক্রেনের চারনোভস্কি থেকে সেই সময়েই আন্ডারগ্র্যাজুয়েট ফিজিসিয়ানের কাজ। মেডিকেল পরীক্ষায় অস্বাভাবিক সাফল্যের পর পশ্চিম ইউক্রেনের একটি সামনের সারির হাসপাতালে প্রত্যক্ষভাবে কাজ করার সুযোগ পান। ১৯১৬ সালে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করার পর স্মলেন্সক ওব্লাস্ট প্রভিন্সের নিকোলস্কোয়ে গ্রামে চিকিৎসক-জীবনের ঘটনাবহুল অধ্যায় শুরু। ১৯১৮ সালে কিয়েভে ফিরে প্রাইভেট প্র্যাকটিস শুরু করার এক বছরের মধ্যে অ্যান্টি-বলশেভিক ‘হোয়াইট আর্মি’-র হয়ে সেনা-চিকিৎসকের দায়িত্ব পাওয়া এবং নর্দার্ন ককেশাসে বেশ কিছুদিন কাজ করার অভিজ্ঞতা। এইসময়েই প্রায়-মারণ টাইফাস রোগের সংক্রমণ, যা থেকে বেরিয়ে এসে সুস্থ হয়ে চিকিৎসক জীবন পাকাপাকিভাবে শেষ করে লেখালেখিতে ডুবে যান বুলগাকভ। কুঁড়ি পায় ‘দ্য মাস্টার অ্যান্ড মার্গারিটা’। তবে চিকিৎসক-জীবনের স্মৃতি বারবার উঠে এসেছে লেখায়। প্রসঙ্গত, নিকোলস্কোয়ে গ্রামের চিকিৎসক-দিনগুলিতে লেখা গল্পগুলি নিয়ে ১৯২৫-১৯২৬-এ প্রকাশিত হয় ‘দ্য কান্ট্রি ডক্টর্স নোটবুক’। এই সময়েই একটি শিশুর চিকিৎসা থেকে সংক্রামিত হয়। অ্যান্টি ডিপথেরিয়া ড্রাগ থেকে তৈরি হওয়া অ্যালার্জি রিয়্যাকশন হয় বুলগাকভের শরীরে এবং সেই অ্যালার্জি কাটানোর জন্য একদিন হঠাৎ মরফিন নিতে বাধ্য হয়েছিলেন তিনি। নেওয়াই কাল হল। দীর্ঘকালীন মরফিনের নেশার ভয়ঙ্কর সেই সময় – শ্বশুরের পরামর্শে ডিস্টিলড ওয়াটার ইনজেক্ট করে ধীরে ধীরে নেশা থেকে মুক্তি পান মিখাইল। এই ঘটনাই ‘দ্য কান্ট্রি ডক্টর্স নোটবুক’-এর সম্ভবত সবচেয়ে আলোচিত এবং ট্র্যাজিক গল্প ‘মরফিন’-এর পটভূমিকা। ডক্টর সার্গেই পোলিয়াকভ আসলে বুলগাকভের অল্টার ইগো। মাইকেল গ্লেনি-র অনুবাদে পোলিয়াকভ, নাকি বুলগাকভের নিজের সেইসমস্ত আর্তনাদ – ‘I’m not afraid of rifle fire now. After all, what can possibly frighten a man obsessed by one thing only – the divine, wonder-working crystals?’ 

অনুরূপ

wave
Read
রবীন্দ্রনাথের কবিতায় ও গানে রথ-প্রসঙ্গ

রবীন্দ্রনাথ যে সময়ে জন্মেছিলেন, কলকাতায় তখন রথ দৈনন্দিন ব্যবহারের মধ্যে সচল ছিল না।...

by Jisan

8

Read
কিসে ইনভেস্ট করব?

সর্বজনীন পেনশন স্কিম, বন্ড, বীমা, ফিক্সড ডিপোজিট এসব করা থেকে ফিক্সড কোন এসেটে ব্যয় করুন।...

by হোসাইন

4

Read
পারসোনাল ব্র্যান্ডিং কেন দরকার?

এন্টারপ্রেনার হই অথবা জব করি, পারসোনাল ব্র্যান্ডিং সবার জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। অন্যরা কিভাবে...

by হোসাইন

19